ভাষা শিখে ইতালির শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের যাওয়ার দ্বার উন্মোচন

প্রকাশিত: ১১:০২ পূর্বাহ্ণ, জুন ২১, ২০২৩ | আপডেট: ১১:০২:পূর্বাহ্ণ, জুন ২১, ২০২৩

 

ইতালীয় ভাষা শিখে ও সুনির্দিষ্ট কাজের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ইউরোপের দেশ ইতালির শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের যাওয়ার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। ভাষা শিখে সেখানকার শ্রমবাজারের উপযুক্ত কাজের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য উত্তীর্ণদের আজ সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

রাজধানীর ডেমরায় আমুলিয়া মডেল টাউনে ইতালবাংলা গ্রীনল্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার ও গ্রীনল্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার একদল তরুণকে বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ ও ভাষাশিক্ষা কোর্স শেষে ইন্টারভিউ ও সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পিথাগোরা কালচার এন্ড এডুকেশন, পিথাগোরা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ভিনসেঞ্জো লুইজি খিরোলি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রবাসি উন্নয়ন সমন্বয় সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ও ইতালবাংলা সমন্বয় ও উন্নয়ন এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শাহ মোহাম্মদ তাইফুর রহমান। ইতালীয়ান ভাষা কোর্স (এ-ও) সম্পন্নকারীদের মাঝে সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইতালবাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ খফরুদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী।

১০০ জন ইতালি অভিভাসন প্রত্যাশী তরুণ সফলভাবে ইতালীয়ান ভাষাশিক্ষা কোর্স ও সুনির্দিষ্ট কাজের সম্পন্ন করে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইতালিয়ান ডেলিগেটের কাছে থেকে সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন।

 

 

প্রধান অতিথি ভিনসেঞ্জো লুইজি খিরোলি জানান, ইতালিতে বর্তমানে ৫ লাখ শ্রমিকের শুন্যতা বিরাজমান। অবৈধ উপায়ে ইতালিতে প্রবেশ করছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিভাসী। কিন্তু তারা ভাষা ও কাজে অদক্ষ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। তাই ইতালীয়ান ভাষা শিক্ষা ও শ্রমবাজারের উপযোগী কাজের ওপর প্রশিক্ষণ নেয়া তরুণদের ইতালী শ্রমবাজারের যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ইতালি ও বাংলাদেশের সরকারি পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের আলোকেই বাংলাদেশে অভিভাসন প্রত্যাশী তরুণদের কারিগরি ও ভাষা শিক্ষা প্রশিক্ষণ শেষে সার্টিফিকেট প্রদান করা হচ্ছে। ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে শিগগিরই সার্টিফিকেট প্রাপ্ত তরুণরা ইতালিতে সরাসরি কাজে যোগ দিতে সক্ষম হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় শাহ মোহাম্মদ তাইফুর রহমান বলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের ইতালীতে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে প্রধান বাধা সেখানকার ভাষাগত অদক্ষতা। আমরা এর মানোন্নয়নে বাংলাদেশে ইতালীয়ান ভাষা শিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছি। ঢাকা, শরিয়তপুরের নড়িয়ায়, গাজীপুর, ব্রাম্মণবাড়িয়াসহ মোট ১০ জায়গায় এখন ইতালীয়ান ভাষা শিখার জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে দেশে এটি আরো বিস্তৃত করা হবে। আগামীতে ইতালিতে অভিভাসন প্রত্যাশীরা নিজেদেও প্রস্তুত করে সেখান যেতে পারবেন।

ইতালিতে অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ইতালি। গত ৭ জুন ইতালির রাজধানী রোমে দেশটির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দ্বিপক্ষীয় অভিবাসন ব্যবস্থার আওতায়, বিশেষ করে নির্মাণ, জাহাজ নির্মাণ ও পর্যটন খাতে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিতে সম্মত হয়েছে ইতালি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ইতালির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা মন্ত্রণালয়ের মহাসচিব রিকার্ডো গুয়ারিগলিয়া আলোচনায় নিজ নিজ পক্ষের নেতৃত্ব দেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মাসুদ বিন মোমেন ও গুয়ারিগলিয়া বাংলাদেশ ও ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রাজনৈতিক পরামর্শসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন।

ইতালি এ বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে যে, বর্তমানে ফ্লুসি ডিক্রির অধীনে ৪৬ শতাংশেরও বেশি কর্মী মৌসুমি এবং অ-মৌসুমি কাজের জন্য বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে আসছেন।
বৈঠকে দুই দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, আইসিটি, কৃষি, অভিবাসন এবং গতিশীলতাসহ একাধিক ক্ষেত্রে সম্পর্ককে আরও গভীর করতে আগ্রহ প্রকাশ করে।