অমরাবতির গল্প মানেই বাগান বিলাসীদের গল্প, পরিবেশ বাদীদের গল্প। কবিতায় অমরাবতির, কিংবা কাব্যে ‘অমরাবতি’। এ রকম একজন অমরাবতিয়ান হচ্ছেন, কবি রোমেনা লেইস । জন্ম ও বেড়ে উঠা সুনামগঞ্জে । উত্তরে মেঘালয় পাহাড়ের নীল আর সুরমানদীর জলের সাথে দক্ষিণে হাওরের আফাল দেখে দেখে সেখানকার বর্ষা আর আষাঢ়ি পূর্ণিমা যে ভাবে মিশে আছে, ঠিক একই রকম হাডসনের তীরেও সেই অনুভূতি রয়েছে।মেঘের ‘দেশে মেঘ বালিকা’ , ভালোবাসার রং নীল, সহ কবির অন্যান্য কাব্যেগুলো তারই সাক্ষ্য বহন করে চলছে।আসুন জেনে নেই কি রয়েছে অমরাবতির অন্যতম সদস্যা রোমেনা লেইসের গল্পে।
গতবছর(২০২২) পাতা ঝরানোর দিনে আপস্টেট এ মুভ করে চলে এসেছিলাম নিউইয়র্ক সিটি থেকে ।এবছর স্প্রিংএর শুরুতেই গাছে গাছে ফুল ফোটা শুরু হলো।প্রতিদিন সকালে বারান্দায় বের হলে নিত্য নতুন ফুল আমাকে সুপ্রভাত জানায় হেসে।আমার শুধু আম্মাকে মনে পড়ে ।প্রতিদিন নতুন নতুন ফুল দেখি আর হাহাকারের মতো মোচড় দিয়ে ওঠে বুকের ভেতর।আ হা বৃক্ষপ্রেমী আমার আম্মা বেঁচে থাকলে এই ফুলগুলো দেখে কতো না খুশী হতেন। ডেফোডিল,এজালিয়া,রডোডেনড্রন,হায়াসিন্থ,
লাইলাক বুশ,ম্যাগনোলিয়া,গোলাপ,বেয়র্ডেড আইরিস,পিওনীর হাসি দেখে আমার মন ভরে যায় ।
আমাদের আম্মার ছিলো ফুল বাগানের নেশা।কতো বৈচিত্র ছিলো তার বাগানে। নানা ধরনের নানা বর্ণের ফুল সব সময় আলো করে থাকতো।আমার মা এর গাছ গাছালী ফল ফুলের খুব শখ ছিলো ।ফুল আর ফলের গাছে ভর্তি আমাদের বাসার নাম আমাদের ভাই রাখে ‘তরুশোভা’।ভাটফুল থেকে ভূঁই চাপা,নাইট কুইন সব ছিলো।গোলাপ, বেলী আর গন্ধরাজতো ছিলোই।নীলফামারী থেকে আনা বকুল গাছ এর চারা এখনো ফুল ফুটিয়ে ফুল ঝরিয়ে যাচ্ছে। বকুলের ফুল দিয়ে গহনা পরেছি আমরা হলুদের অনুষ্ঠানে ।বকুলের ফুল গুলো মালা গেঁথে আম্মা রেখে দেন ।আম্মার গাঁথা বকুলের শুকনো মালা এখনো আছে।আম্মা দুপুরে কখনো ঘুমাতেন না। দুপুরে ভাত খাওয়ার পর মুখে পান নিয়ে কাচি ছুরি নিয়ে উঠোনের গাছগাছালী ছেটে দিতেন।আর ঝরে যাবে যে ফুল তা কেটে আনতেন। আমরা ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখতাম ।আম্মার বাগানের সুনাম ছিলো শহরেও।নতুন কোন ফুলের গাছ কারো বাসায় আছে শুনলে আম্মা দেখতে যেতেন আর ডাল,বীজ বা চারা নিয়ে আসতেন।গভীর রাতে নাইটকুইন ফুল দেখতে পঁচাত্তর সালে আম্মা, আরতিমাসিরা বেনুস্যারদের বাসায় গিয়েছিলেন।ফুল ফোটার পালা দেখে ভোরবেলায় নাইট কুইনের পাতা নিয়ে ফিরেছিলেন।আমাদের বাসায় প্রায় পনেরো বছর পর নাইট কুইন ফুটতে শুরু করে।
সারা দুনিয়া ঘুরে মন কেন যেন পড়ে থাকে তরুশোভায়।তরুশোভা আমার বাবার বাড়ি । আমার জন্ম স্থান ।নাড়িপোতা আছে ঐ বাড়িতে ।তাই সব কিছুর পর মনটা ওখানে ছুটে যায়। বাসার গেটে বাগান বিলাস আর অলকানন্দার ঝাড়। সেই বাড়ি থেকে উত্তরে তাকালে মেঘালয়ের নীল পাহাড়ের উঁচুনিচু ঢাল।ঝর্নাধারা।দক্ষিণে তাকালে হাওর ।বর্ষার দিনে হাওরের জলের ঢেউ মহাসমুদ্র যেন।আমাদের বাসায় এহেন গাছ নেই যা নেই।নারিকেল গাছের সারি পুকুরের পার ধরে।সুপারির সারি বাসার পশ্চিম সীমানা প্রাচীর জুড়ে।কলা,পেয়ারা,পেঁপে,আতা,আম,জাম,লিচু,জামরুল, অড়বরই,জলপাই সব আছে।
শৈশবে বাসার সামনে ছিলো বিশাল এক বটগাছ ।কোন এক ঝড়ে বটগাছটি পড়ে গিয়েছিলো । গোলাপ ছিলো রকমারি ।হালকা গোলাপী গোলাপের একটি গাছ বারান্দার সামনে ছিলো । রাতের রাণী হাসনাহেনার ঝাড় ছিলো ।গন্ধরাজ ছিলো ।বেলীফুল খুব সুঘ্রাণ ছড়িয়ে ফুটতো।মর্নিংওয়াকে গিয়ে নিয়ে আসা শেফালীর গাছটি আশ্বিন মাসে উঠোন ভরে তোলে সাদা আর কমলা রং আলপনায়।তারা ফুলের গাছে ঝুম বৃষ্টির মতো ফুল আসতো ।স্কুল গ্রীষ্ম কালীন ছুটি হলে তারা ফুলের মালা গেঁথে টিচারদের জন্য নিয়ে যেতাম।আষাঢ় মাসে র বৃষ্টি ধোয়া দোলনচাপা মনে দোলা দিয়ে যেতো।কদম আর কৃষ্ণচূড়াও ছিলো ।এখন
শুনেছি জারুল আর রাধাচুড়াও আছে।
অমরাবতি তে যখন নানা রকম ফুল আর ফলের গাছ আর বাগান দেখি আনন্দ লাগে। ফুল ,ফল, গাছ এর প্রাণশক্তি অন্য রকম। অমরাবতি শুধু ফল ফুল নয়, পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে যুক্ত হয়ে আছি অমরাবতির ক্যাফেলায়।