অমরাবতির গল্প মানেই শৌখিন বাগানীদের গল্প,পারিবারিক বাগানের গল্প। ঘর,বাড়ী বাসা বা ছাদ বাগানের গল্প ।বাগান করাটা ও একটি আর্ট। একটি সুন্দর মনোরম বাগান একটি বাসা বাড়ীর চেহারা পাল্টে দিতে পারে যদি তা হয় একটি সুন্দর পরিকল্পনার প্রতিফলন। এ রকম একজন সৌখিন পরিকল্পনাকারী বাগান বিলাসী হচ্ছেন অমরাবতির অন্যতম সদস্য মোঃ আবুল হোসেন। আসুন জেনে নেই কি রয়েছে অমরাবতিয়ান আবুল হোসেনের গল্পে
আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা গ্রামে। ছোটবেলা থেকে আমার অভিভাবকরা আমাদের শরীর চর্চার মনোনিবেশ করতে বলতেন এবং আমরাও করতাম। যেমন খেলাধূলা,বাগান করা, গাছ লাগানো এসব ছিল আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য একটি বিষয় । তাই ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধূলার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল বেশী এবং আমি নিয়মিত ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন,হাডুডু সহ বিভিন্ন রকমের খেলাধূলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম।তবে একটা বিষয় আমার বোধগম্য নয়, কেন জানি শৈশব থেকেই গাছ লাগানোর একটা প্রবনতা আমার মধ্যে ছিল ।আম, জাম,কাঠাল,লিচু, সুপারি সহ বিভিন্ন ধরনের ফলজ গাছের চাঁরা রোপন করতাম। শুধু ফলজ নয়, সেই সাথে বনজ গাছ ও রোপন করতাম। যেমন সেগুন, মেহগনি ইত্যাদি।এস,এস, সি পাশ করার পর যখন শহরে চলে আসি তখন থেকেই ছোট পরিসরে হলেও টবের মধ্যে ফুল গাছ লাগাতাম।গাছ লাগানোর স্পৃহাটা আমি আমার আব্বার কাছ থেকে পেয়েছিলাম ।আমার আব্বা বৃটেন প্রবাসী ছিলেন। আমাকে আব্বা চাইলে আমার ছোট বেলায় ইংল্যান্ডে নিয়ে আনতে পারতেন। কিন্তু আব্বা তা করেননি।আব্বার ইচ্ছা ছিল আগে আমার লেখাপড়া, পরে বিদেশ এবং তাই হয়েছে।মহান আল্লাহ আব্বার চাওয়াকে অপূর্ণ রাখেননি।১৯৯৪ সালে আমি প্রথম ইংল্যান্ড আসি।আসার পর দেখলাম আব্বা বাসার ব্যাক গার্ডেনে নিয়মিত সব্জি লাগাতেন,ফ্রন্ট গার্ডেনে বিভিন্ন ধরনের ফুল এবং ঘরের ভিতরে হাউস প্ল্যান্ট লাগাতেন।আব্বার এই বাগান প্রীতি দেখে আমার উৎসাহ দ্বিগুণ হয়ে যায়, আর তাই আব্বার সাথে বাগান করার মনোনিবেশ করি কাজের ফাঁকে ফাঁকে। শুধু আমি নয়, আমার স্ত্রী শিল্পী ও আব্বার সাথে বাগানে মনোনিবেশ করলেন।
১৯৯৯সালে আমরা নতুন বাড়ী কিনে স্থায়ী ভাবে বার্মিংহামের গ্রেইটবারে বসবাস শুরু করি। মূলতঃ তখন থেকেই আমরা আমাদের মত করে পরিকল্পনা মাফিক বাগান করা শুরু করি।আমার বাসার বাক গার্ডেনে একটু একটু বাগান শুরু করি, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে এর পরিবর্তন করি। পরিবর্তনের মূল কারণ হলো ‘রুচি’।বাগান করলে বাগানের একটা রুচি থাকা দরকার এবং তাহলো সময়োপযোগী গাছ বেঁচে নেওয়া।ইউক তা ফুল , ফল , ঔষধি কিংবা অন্য কিছু। যেমন যে কোন ফুল বাগানের সৌন্দর্যের প্রতিনিধিত্ব করে গাদা ফুল (গেন্ডাফুল)। বাগান করবেন গাদা ফুল থাকবে না, তা কেমন করে হয়।আবার শীত প্রধান দেশে চন্দ্র মল্লিকার মত দীর্ঘ স্হায়ী ফুল ফুল থাকাটাও দরকার। চন্দ্র মল্লিকার আবার দুই রাজযোজক হলো ডালিয়া ও কসমস। কি রং নেই ডালিয়ার ? যা যে কারোর নজর কাড়ে।ঠিক তেমনি কসমসের মিক্স ফুলগুলো কম সুন্দর নহে।সুতরাং বৃটেনের মতো শীত প্রধান দেশে গাদা ও চন্দ্রমল্লিকার পাশাপাশি এই ফুল গুলো থাকা দরকার। আমাদের বাগানে বিভিন্ন সময়,বিভিন্ন জাতের গাদা , চন্দ্রমলিকা, ডালিয়া, কসমস ,জেসমিন, লিলি ওয়াটার লিলি, ক্যামেলিয়া, ওয়েস্টরিয়া ছাড়া ও Dicksonia,snowball, olive,plame pomegranate trees সহ বিভিন্ন ধরনের গাছের পাশাপাশি বাগানে সব্জি ও চাষ করা হয়। সুতরাং স্হান, কাল ভেদে পরিবেশের সাথে সংযোগ রেখে আমাদের বাগানের গাছ গাছালীর পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করি।এই পরিবর্তন আর পরিবর্ধনের ফলে আমাদের বাগান শুধু আমাদের নিজেদের মধ্যে নয়; আত্মীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধব সহ অনেকের কাছে ভালো লাগে।আর এই ভালো লাগা থেকে অনুপ্রেরণা পাই, অনুপ্রাণিত হই,এবং বাগান করি ।বর্তমানে আমি আমার গার্ডেন সহ আমার আম্মার গার্ডেন নিয়মিত পরিচর্যা করি।আমার গার্ডেনের মেইন পরিচালক আমার স্ত্রী শিল্পী। বাগানের প্রতি আমার এত দুর্বলতা তা ভালোবাসা না পাগলামী জানি না।সময় পেলে আমি কাছের অথবা দূরের বিভিন্ন গার্ডেনে যাই, অনেক সময় মনের অজান্তে প্রয়োজন ছাড়া ও অনেক plant ক্রয় করে থাকি। আনুমানিক ২০১৮ সালের দিকে আমি অমরাবতির সদস্য হই।পরবর্তীতে আমার স্ত্রী শিল্পী আমার সহপাঠী বন্ধু অমরাবতির কর্ণধার শেবুল চৌধূরীর অনুরোধে অমরাবতির সদস্য হন।২০২১ সালে অমরাবতির বাগান প্রতিযোগিতা হয়।তখন শিল্পী আমার বন্ধু শেবুলের পরামর্শে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন।এই বৎসর আমাদের বাগান বিজয়ী ক্যাগরিতে Gold Award পুরস্কার প্রাপ্ত হয়।
পরিশেষে যে কথাটি বলা দরকার তাহলো ,বাগান করার প্রচুর উপকারিতা রয়েছে।যেমন শরীর চর্চা ,মনে শান্তি, দুঃচিন্তা মুক্ত থাকা যায়।আমি এবং শিল্পী দুজনেই ফুল টাইম চাকরী করি, অবসর পেলেই বাগানে সময় দেই।গাছ পালা অনেকটা আমাদের বাচ্চাদের মত হয়ে গেছে। এদের দেখাশুনা করতে হয়।ঐ সব hobby থেকে করা।আমাদের outdoor kitchen আছে। summer আসলে বাহিরে রান্না করতে ভালোবাসি। এ সবই hobby. আমরা সব সময় BBC Gardeners world watch করি।সবাইকে বাগান করার পরামর্শ দেই।সেই সাথে সবাইকে অনুরোধ করবো বিশ্ব পরিবেশবাদী সংগঠন,বাগান বিলাসীদের ঠিকানা,অমরাবতির ক্যাফেলায় যুক্ত হন । অমরাবতির বর্তমান আওয়াজ হচ্ছে আসুন গাছ লাগাই, পরিবেশ বাঁচাই।
আমরা সবাই অমরাবতিয়ান।অমরাবতির সাথে আছি এবং থাকি এ প্রত্যাশা রহিল।